শনিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৪৭ অপরাহ্ন
[গল্পটি কাল্পনিক ও ব্যঙ্গাত্মক। গল্পের তিন কেন্দ্রীয় চরিত্র: কাঠবিড়ালী-১ কে জিউস, কাঠবিড়ালীনী-২ কে আফ্রোদিতি এবং অপর বিদ্রোহী চরিত্র কাঠবিড়ালী-৩ কে বংশীবাদক নামে নামাঙ্ককিত করা হয়েছে।]
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মহসিনহল মাঠের পূর্ব ও পশ্চিম পার্শ্বে এক কাঠবিড়ালী পাড়া গড়ে ওঠেছে। মাঠের লিচু, পেয়ারা, জামরুল, জলপাই গাছগুলিতে ওদের বসবাস। কারণ এদের পূর্বপুরুষ ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর চাকুরীজীবী। এই সুবাদে ক্যাম্পাস এলাকাতেই এদের স্থায়ী বসবাস। বিশ-পঁচিশটি পরিবার নিয়ে লন্ডনের ‘বাংলাটাউন’ কিংবা কানাডার ‘বেগমপাড়ার’ মতো ওদের নিজস্ব সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য অনুযায়ী গড়ে তুলেছে একটি পাড়া, একটি অভয়াআরন্য। কাঠবিড়ালীদের পাড়ার তরুন প্রজন্মের অনেকেই ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। কেউ কেউ অনেক মেধাবী। এদের মধ্যে কাঠবিড়ালী-১ অর্থাৎ জিউস এবং কাঠবিড়ালী-২ অফ্রোদিতি উভয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী এবং জিউস হলো ইংরেজী সাহিত্যের মাস্টার্স শেষবর্ষের ছাত্র আর অফ্রোদিতি প্রেম সাহিত্যের অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। আরেক প্রতিবেশী, ওদের সমবয়সী, এক সময়ের খেলার সাথী কাঠবিড়ালী -৩ অর্থাৎ বংশীবাদক হলো অর্ধ শিক্ষিত এবং বহেমিয়ান জীবন-যাপনে অভ্যস্থ। তার নিত্যদিনের কাজ হলো কাটাবন, নীলক্ষেত, এ্যালিফ্যান্ড রোড, নিউমার্কেট প্রভৃতি এলাকায় মাস্তানী করা। এ্যারাম-গ্ল্যালাক্সীতে মদ খাওয়া, হাইকোর্টের মাজারে গাঁজা খাওয়া আর কিছু আবেগীয় ও জীবন তাড়িত গান শোনা।
অত:পর জিউস আর অফ্রোদিতি একে অপরকে ভালবাসতে শুরু করল। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাশের ফাঁকে ফাঁকে ওরা টিএসসি, রমনা, পলাশীতে আড্ডা দিত। কিন্ত প্রেমের চুড়ান্ত পর্যায়ে প্রথম ক্লাশ পাওয়া ছাত্র জিউস লন্ডনের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে স্কলারশীপের সুযোগ পেয়ে গেল। তথাপি বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে জিউস উড়ে গেলো লন্ডনে। এ দিকে আফ্রোদিতি নি:সঙ্গ হয়ে গেলো। এবার আফ্রোদিতির নজর পড়ল বাল্যবন্ধু বখাটে বংশীবাদকের উপর। মাতাল বংশীবাদক পাগলের মতো ভালবাসতে শুরু করল আফ্রোদিতিকে। আর এটাই পরবর্তীতে কাল হলো বংশীবাদকের জীবনে।
দ্বিতীয় পর্ব:
নারী মানেই পুরুষের কাছে ভালবাসা, নারী মানেই সঙ্গ, নারী মানেই আবেগ তাড়িত কথা বার্তা ও রাগ-ভালবাসা। আর পৃথিবীর সকল প্রেমিকা পুরুষের কাছে সঙ্গচায়, ভালোবাসা চায়। আবার কখনও ঝগড়া করে; আবার কখনও আহলাদে ও ভালবাসায় আকুল হয়ে যায়। কিন্তু বহে মিয়ান ও উচ্ছৃঙ্খল জীবনকারী বংশীবাদক এবার এক অবাধ প্রেমের টানে আদা-জল খেতে শুরু করল। প্রেমিকা অফ্রোদিতি তাকে নিয়ে ফুচকা খেতে যায়, টি.এস.সি তে গান শুনতে যায়। নিজের জীবনের নি:সঙ্গতা এভাবে কাটাতে লাগল। আর বংশীবাদকের অবুঝমন তাকে হৃদয়ে স্থান দিল। নিজের জীবনের চেয়েও বেশি ভালবাসতে শুরু করল প্রেমিকা অফ্রোদিতিকে। কিন্তু ঘটনা মোড় নিল অন্য দিকে, এবার বিষয়বস্তু এক নতুন বাঁকে প্রবাহিত হলো। যখন পূর্বের প্রেমিক জিউস দ্রুত পি.এইচ.ডি শেষ করে দেশে ফিরে এল। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজ বিভাগে লেকচারার চাকুরী নিল। তখন বিশ্ব বেঈমান অফ্রোদিতি মধ্যবর্তী প্রেমিক বংশীবাদককে ভুলে গেল। বিয়ের সাজে জুই, গোলাপে শোভিত হয়ে প্রতিষ্ঠিত জিউসকে বিয়ে করল। কিন্তু ঐ রাতে বিয়ের দাওয়াত পেলনা আবেগীয় ও বোকা প্রেমিক বংশীবাদক। নিজ আবাসে বসে দেখল বিয়ে বাড়ির ঝাড়বাতি, আমন্ত্রিত অতিথিদের আপ্যায়ন প্রভৃতি। তখন প্রতিবাদীমনের অধিকারী, এক হৃদয়বান প্রেমিকা প্রেমিক পুরুষ প্রচন্ড মদপান করে মারা গেল। কিন্তু ভালবাসার টানে অফ্রোদিতিকে অভিশপ্ত করতে পারল না। তবে মহান সৃষ্টিকর্তার ইশারায় বংশীবাদকের মনে কষ্ট দেওয়ার জন্য আজীবন এই দম্পত্তি সন্তানহারা হয়ে রইল। এটা ছিল সৃষ্টিকর্তা-কর্তৃক এক ছলনার শাস্তি।
শাফায়েত জামিল রাজীব
প্রধান সম্পাদক, একুশে টাইমস্