দেশে ডেঙ্গির প্রকোপ ক্রমেই বাড়ছে। গত শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় বছরের সর্বোচ্চ ৫০০ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে আরও ২ জনের। এ নিয়ে চলতি মাসে ডেঙ্গিতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ২৯। চলতি বছর এ নিয়ে ডেঙ্গিতে মৃত্যু হলো ৪৪ জনের। লক্ষণীয়, শনিবার পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় যে ৫০০ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, তাদের মধ্যে ৪১৭ জনই ঢাকা নগরীর বাসিন্দা। চলতি বছর মোট ৬ হাজার ৮৩৯ জন ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৫ হাজার ৩৫২ জন ভর্তি হয়েছেন ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে। এতে স্পষ্ট, ডেঙ্গি বাড়ছে মূলত রাজধানীতে। এ পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মশক নিয়ন্ত্রণ কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। বস্তুত রাজধানীতে মশক নিধন কার্যক্রমই সেভাবে চোখে পড়ছে না। মশক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনায় ত্রুটির কথাও বলছেন অনেক বিশেষজ্ঞ। বলা যায়, রাজধানীতে ডেঙ্গির প্রকোপের মূল কারণ মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের ব্যর্থতা।
এটি অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, মশা নিয়ন্ত্রণে প্রতি বছর ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন বিপুল অঙ্কের টাকা ব্যয় করলেও সে অনুযায়ী সেবা মিলছে না। বিষয়টি এমন নয় যে, ডেঙ্গির মৌসুম এলেই মশা নিধনের কার্যক্রম চালাতে হবে। বিশেষজ্ঞরা এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে বছরজুড়ে কার্যক্রম পরিচালনা করার পরামর্শ দিয়ে আসছেন অনেক দিন ধরেই। দুঃখজনক হলো, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এ ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়নি। যেহেতু ডেঙ্গি থেকে রক্ষা পাওয়ার কোনো প্রতিষেধক বা টিকা নেই; তাই সুরক্ষিত থাকার একমাত্র উপায় হলো মশার কামড় থেকে মানুষকে রক্ষার ব্যবস্থা করা। এজন্য প্রথমেই রোধ করতে হবে এডিস মশার প্রজনন ও বংশবিস্তার। কোথাও যাতে পানি জমে থাকতে না পারে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। পাশাপাশি সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্ব হলো নগরীর সর্বত্র, বিশেষ করে যেসব স্থানে মশার বংশবিস্তারের অনুকূল পরিবেশ রয়েছে, সেসব স্থানে জমে থাকা পানি অপসারণ এবং মশা নিধনের কার্যকর ওষুধ ছিটানোর ব্যবস্থা করা। যেখানে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেই, সেখানে স্বভাবতই কয়েকদিন ধরে পানি জমে থাকে। বিশেষত নির্মাণকাজ চলছে এমন জায়গায় এটি বেশি দেখা যায়। এসব জায়গায় জমে থাকা পানি অপসারণের পাশাপাশি নিয়মিত মশার ওষুধ ছিটাতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে, এডিস মশা যেন কোনোভাবেই ডিম পাড়ার সুযোগ না পায়। নিরাপদ ও সুস্থ থাকার জন্য সরকারের পাশাপাশি প্রত্যেক নাগরিক এডিস মশার বংশবিস্তার রোধে সচেতন ও সতর্ক থাকবেন, এটাই কাম্য।