রবিবার, ১০ নভেম্বর ২০২৪, ১১:০২ পূর্বাহ্ন
২০০০ সালের প্রথম দিকে আব্বা ধলপুর এলাকায় বাসা নিয়েছেন। আমার ছোটছেলের বয়স ছয় মাস। আব্বা হঠাৎ বেশ অসুস্থ হয়ে পড়লেন। আব্বার বাসায় কিছু দিন থাকার জন্য এলাম। অদ্ভুত এলাকা এই ধলপুর। দিনদুপুরে এখানে প্রকাশ্যে হেরোইনের ব্যবসা চলে। সন্ধ্যার পর এলাকার চেহারা একেবারে অন্যরকম হয়ে যায়। কেমন একটা সুনসান ভাব। বাতাসে ওড়তে থাকে শুধু মাদকের ঘ্রাণ। চারপাশে কী এক ফিসফিসানি। মাঝেমধ্যে চলে যায় পুলিশের টহল দেওয়া গাড়ি। সে সময় একদিন সকালে বাসার গেট খুলে বাইরে যাব। গেট খুলতেই পায়ের ওপর লুটিয়ে পড়ল একজন মানুষের দেহ। আমি আঁতকে ওঠে চিৎকার দিলাম। আশপাশের দোকানদাররা ছুটে এলেন। আমার পায়ের ওপর থেকে টেনে তুললেন দেহটা। না, সেটা কোনো মানুষের দেহ নয়। সেটা তখন একটা মানুষের লাশ। সবাই চিৎকার করে বলল হেরোইনসি মারা গেছে। আপনাদের গেটের কাছে মারা গেছে। লোকটার শরীরের ঠান্ডা স্পর্শ তখনও আমার পায়ে লেগে আছে। আমি বিস্ময়ে কাঠ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকি। সারা শরীর আমার অবশ হয়ে আসে। সে সময় আমি দেখেছি হেরোইনে আসক্ত নর-নারীদের। দেখেছি বেশ কিছু তরুণ ছেলেমেয়েকে। তরুণ ছেলের সংখ্যা যেমন, তেমনি তরুণীদের সংখ্যাও কম নয়। এদের বয়স পনেরো থেকে শুরু করে চব্বিশ-পঁচিশের মধ্যেই বেশি। এসব মেয়েকে দেখলেই বোঝা যায় এরা ভালো পরিবার থেকে এসেছে। কিন্তু সর্বগ্রাসী মাদক তাদের সব কেড়ে নিয়েছে। কিছু কিছু মেয়ে দেখি প্রথমে যখন তারা আসে বেশ ভালো কাপড়চোপড় পরা। ধীরে ধীরে তাদের বেশবাস এত মলিন হয়ে যায যে বোঝাই যায় না যে তারা কোনো একদিন ভালো কোনো পরিবারের সন্তান ছিল। তাদের পোশাক এবং চেহারার মালিন্য দেখে মনে হয় তারা নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে এসেছে। খোঁজ নিয়ে জানতে পারি হেরোইনের টাকা জোগাড় করার জন্য তারা তাদের দামি পোশাক-আশাকও বিক্রি করে দেয়। মাদকসেবী এসব মেয়ে ও নারী শেষ পর্যন্ত অসামাজিক কার্যক্রমে জড়িত হয়ে রাস্তার নারীতে পরিণত হয়।