স্কুলের পাঠ্যবইতে দুলে দুলে মুখস্থ করছে লাবীদ, দিনে চব্বিশ ঘণ্টা। তিরিশ দিনে এক মাস। বারো মাসে এক বছর। বছরে ছয়টি ঋতু। বিচলিত ভঙ্গিতে কোহাফা কাকা এসে হাজির, হায়! আমার সর্বনাশ হয়ে গেছে লাবীদ!
বই থেকে মুখ তুলল লাবীদ। কাকার বিষণ্ণ মুখে কালো মেঘের ঘনঘটা। কাকাকে কাল রাতে ভিমরুল হুল ফুটিয়েছে ডান কানের লতিতে। কাকার বাড়ি ঘেঁষে একটা আমগাছ। আমগাছটিতে ভিমরুল বাসা বেঁধেছে। শুধু বাসা না, সাঙ্গোপাঙ্গ নিয়ে রীতিমতো মানুষ কামড়ানোর কামান যেন। কাকা রাতে মশারি খাটিয়ে ঘুমুচ্ছেন, ফাঁকফোকর পেয়ে কখন যেন একটা ভিমরুল ঢুকে পড়ে টেরই পাননি। যখন টের পেলেন, কানের লতিটায় মরিচ ঘষে দেওয়ার মতোন ঝাঁঝাঁ করে জ্বালা দিয়ে উঠল। সকালে ঘুম থেকে উঠে লাবীদ দেখে, কাকার একটি কানের লতি ফুলে ঝুমকো জবার মতোন দুলে উঠছে! সেই দৃশ্য দেখে লাবীদের হাসতে হাসতে পেটের অবস্থা খারাপ। কাকা চমৎকার একটি নৌকা বানিয়েছেন। কাকা বানিয়েছেন বলাটা আসলে ঠিক হলো না, মিস্ত্রি দিয়ে বানিয়েছেন। সাধারণত নৌকার রং কালো হয়, আলকাতরার রঙে রং। কিন্তু এই রং লাবীদের অপছন্দ। সে কাকাকে বলল, এত সুন্দর নৌকাটির রং কালো হওয়া কোনো ভালো লক্ষণ নয়, নীল আমার পছন্দের রং। যদি নৌকাটির রং নীল হয় অন্য সব নৌকা থেকে আলাদা করে চেনা যাবে। সবাই তাকিয়ে থাকবে। পাড়ায় লোকের নৌকার তো অভাব নেই। কথাটা একেবারে ফেলে দেওয়ার মতো নয়, লাবীদ ছোট মানুষ হলেও বুদ্ধি-জ্ঞানে কোহাফা কাকার সমান। সঙ্গে সঙ্গে কাকা বাজার থেকে এক টিন রং এনে দিলেন। দুজনে মিলে নৌকাটিতে রং করলেন। নৌকা পুরোদস্তুর ঠিকঠাক হওয়ার পর কাকা চিন্তিত মুখে জিজ্ঞেস করলেন, হ্যাঁ রে লাবীদ, নৌকা তো বানালাম। এখন এই নৌকা দিয়ে আমরা কী করি বল তো?
লাবীদও কাকার মতোন মহা দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছে। আসলেই নৌকা দিয়ে তারা কী কী করতে পারে, এ রকম ভাবনা তো নৌকা বানানোর মুহূর্তে একবারও মাথায় আসেনি। অনেকক্ষণ ভাবনা শেষ হলে লাবীদ বলল, কাকা, এখন তো বর্ষাকাল। পানির অভাব নেই। আমরা নৌকাটিকে সারাক্ষণ পানির নিচে ডুবিয়ে রাখব।