পৃথিবীতে যত খাবার আছে, তার মধ্যে অন্যতম পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবারটি হচ্ছে ডিম। প্রাচীনকাল থেকেই ডিম মানুষের খাদ্যতালিকায় প্রোটিন এবং পুষ্টি উপাদানের সবচেয়ে সহজ উৎস। বাংলাদেশে প্রাণিজ আমিষের অন্যতম উৎস ধরা হয় ডিমকে। পুষ্টিবিদরা বলেন, যদি সুস্থ থাকতে চান, প্রতিদিন ডিম খান। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) পুষ্টিমান অনুসারে বছরে একজন মানুষকে কমপক্ষে ১০৪টি ডিম খেতে হবে।
সারা পৃথিবীতেই ডিম একটি সাশ্রয়ী ও সহজলভ্য আমিষজাতীয় খাদ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু কয়েক দিন ধরে বাজারে ডিমের যে মূল্য দেখা যাচ্ছে এটা এখন সীমিত আয়ের মানুষের কাছে সাশ্রয়ী কোনো পণ্য নয়। বাজারের ব্যয় সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে নিম্ন, নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারকে। মঙ্গলবার সময়ের আলো প্রধান শিরোনাম করেছে-পাত থেকে বাদ পড়ছে ডিম।
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, আগে এক হালি ডিমের দাম ছিল ২০ টাকা আর এখন খুচরা প্রায় একটা ডিমের দামই ২০ টাকা। ফুটপাথের সেদ্ধ ডিম বিক্রেতা বলছেন, কিছু দিন আগেও বেলা ৩টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত দোকান নিয়ে বসলে ২০০-এর বেশি ডিম বিক্রি করতে পারতাম। কিন্তু তা এখন কমে অর্ধেকে দাঁড়িয়েছে। আগে রিকশাওয়ালা থেকে শুরু করে সাধারণ পথচারী ডিম খেত। কিন্তু বেশি দাম হওয়ায় এখন অনেক মানুষই সেদ্ধ ডিম খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। এমন ঊর্ধ্বমুখী দামে নিম্নবিত্তের পাশাপাশি চিন্তিত মধ্যবিত্তও। কিছু দিন আগেও বাচ্চাদের পুষ্টির চাহিদা পূরণে অভিভাবকরা টিফিনে সন্তানদের ডিম খাওয়ানোর চেষ্টা করতেন। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, অনেকেই বাচ্চাদের টিফিনে ডিম দিতে পারছেন না। এর আগেও গত বছরের আগস্ট মাসে ডিমের দাম হঠাৎ করে বেড়ে গিয়েছিল।
তবে শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বজুড়েই বেড়েছে ডিমের দাম। যুক্তরাষ্ট্রের পরিসংখ্যান বিভাগ মূল্যস্ফীতির যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে বলা হচ্ছে, দেশটিতে জানুয়ারিজুড়ে ডিমের দাম বেড়েছে ৭০ দশমিক ১ শতাংশ। এ ছাড়া কানাডা, ফ্রান্স, নিউজিল্যান্ড, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে ডিমের দাম বেড়েছে। জাপানের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানাচ্ছে, টোকিওতে ডিমের দাম রেকর্ড ছুঁয়েছে।
অথচ ডিমের দাম বাড়লেও ক্ষুদ্র খামারিরা এর কোনো সুফল পাচ্ছেন না। কারণ বিভিন্ন জায়গায় অসাধু ব্যবসায়ীদের একটি সিন্ডিকেট ডিমের দাম নির্ধারণ করে দেয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অথচ ডিমের মূল্যবৃদ্ধির কারণে দৈনিক আমিষ গ্রহণে কাটছাঁট করতে বাধ্য হচ্ছে সাধারণ মানুষ। ফলে জনস্বাস্থ্যে বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর নজরদারি বাড়ানো উচিত। সমৃদ্ধ-উন্নত জাতি গঠনে নাগরিকদের পুষ্টিসেবার মান নিশ্চিতের কোনো বিকল্প নেই। শিশু থেকে বয়স্ক-সবার পুষ্টি নিশ্চিত করতে ডিমের দাম কমানো এবং প্রয়োজনে আমদানি কিংবা উৎপাদনে ভর্তুকি ও প্রণোদনা দেওয়া উচিত বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আমরা প্রত্যাশা করি, ডিমসহ অন্যান্য নিত্যপণ্য যৌক্তিক মূল্যে মানুষের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাগুলো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।