বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৩১ অপরাহ্ন

ছাত্রলীগের চার খলিফা দুই শিবিরে

ছাত্রলীগের চার খলিফা দুই শিবিরে

স্বাধীনতার উষালগ্নে; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীক ছাত্রলীগের চার নেতাকে ‘চার খলিফা’ বলে রাজনৈতিক মহলে আখ্যায়িত করা হয়। মুক্তির দিশারী চার খলিফা হলেন- কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকী, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক শাহজাহান সিরাজ এবং ডাকসুর ভিপি অ.স.ম. আব্দুর রব ও ডাকসুর জি.এস আ: কুদ্দুস মাখন প্রমুখ। এই চার ছাত্রলীগ নেতা ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম কান্ডারী। ২রা মাচ ’৭১ সালে উনাদের উদ্যোগে আ.স.ম আব্দুর রব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের সামনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন।
ছাত্রলীগের অতীত ইতিহাস, ঐতিহ্যকে অবলোকন করতে গিয়ে যদি একটু পেছনের দিকে তাকাই; তাহলে দেখতে পাওয়া যাবে ’৬৯ সনে ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শেখ ফজলুল হক মনি রাজনীতির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়েন। তখন শেখ মনির সাথে মতাদর্শ নিয়ে কোন্দলে জড়িয়ে পড়েন ছাত্রলীগের আরেক বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল আলম খান। আবার ’৬৯-এর গণঅভূত্থানের সময় সিরাজুল আলম খানের দীর্ঘদিনের সহচর ডাকসাইটে যুবনেতা আ: রাজ্জাক ও ডাকসুর ভি.পি তোফায়েল আহমেদ এর সাথে মনির ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি পায়। তখন ছাত্রলীগ ২টি উপদলে বিভক্ত হয়। একটি মনিপন্থী আর অপরটি সিরাজ পন্থী। প্রথম উপদলটি জাতীয়তাবাদী ও গণতান্ত্রিক চেতনার সাথে সম্পৃক্ত ছিল আর অপর উপদলটি সমাজতান্ত্রিক চেতনা লালন-পালন করত। সিরাজপন্থীদের কাছে চে-গুয়েভারা, মাওসেতুং, ফিদেল ক্যাস্ট্রো প্রমুখ বিপ্লবীরা ছিল তাদের আইডল। এমতাবস্থায় সিরাজপন্থী ছাত্রলীগের সাথে যুক্ত হয় ছাত্রনেতা হাসানুল হক ইনু এবং কাজী আরেফ আহমেদ। আ ফ ম মাহবুবুল হক, শরীফ নূরুল আম্বিয়া প্রমুখ।

অত:পর ’৭০-এর সাধারণ নির্বাচন ও ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ নিকটবর্তী হওয়ায় উপদলীয় কোন্দলটি ধামাচাপা পড়ে যায়। ’৭১-সনে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে মনি সিরাজুল আলমখান, আ: রাজ্জাক, তোফায়েল আহমেদ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ ভারতীয় মেজর উবান সিং এর প্রচেষ্টাই সামরিক ট্রেনিং গ্রহণ করে এবং ‘মুজিব বাহিনী’ গঠিত হয়। কিন্তু বিজয় অর্জিত হবার পর ’৭২ প্রারম্ভে পূর্বের কোন্দলটি আবারও চাঙ্গা হয়। আগুনের তোষের মতো জ্বলে ওঠে। বিভক্ত হয়ে যায় ছাত্রলীগের চার খালিফা। একদিকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকী, ডাকসুর জি.এস আ: কুদ্দুস মাখন এবং অন্যদিকে ডাকসুর ভি.পি আ.স.ম আব্দুর রব ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাজাহান সিরাজ প্রমুখ। মনিপন্থী বনাম সিরাজপন্থী। অবশেষে ’৭২-এর জুন মাসে পল্টন ময়দানে সিরাজপন্থী ছাত্রলীগের কাউন্সিল অধিবেশনের মধ্যদিয়ে ছাত্রলীগ বিভক্তির বহি:প্রকাশ ঘটে। অত:পর ছাত্রলীগের চার খলিফা-দুই শিবিরে আনুষ্ঠানিকভাবে বিভক্ত হয়ে যায়। উল্লেখ্য যে, সিরাজপন্থী ছাত্রলীগ অল্প কিছুদিনের মধ্যেই জাসদ (ছাত্রলীগ) যোগ দেন।

শাফায়েত জামিল রাজীব
সম্পাদক,
একুশে টাইমস্।

 

Print Friendly, PDF & Email

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




© All rights reserved © 2021
Design By Rana