শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:৪৪ পূর্বাহ্ন

হে প্রভু, তুমি আমায় ক্ষমা করো

হে প্রভু, তুমি আমায় ক্ষমা করো

[ প্রবন্ধটি রূপক অর্থে লেখা। কোন সত্য ঘটনা বা বিষয়কে অনুকরণ করে নয়। আবেগতাড়িত অনুভুতি থেকে সৃষ্ট]
আমি যখন সুনির্মল শৈশব জীবন কাটিয়ে কৈশোরে পদার্পন করিলাম। তখন আমার ভদ্র-নিরীহ অভিভাবকগণ, আমাকে বলল তুমি কখনোও মিছিলে যাবে না, কখনোও অস্ত্র হাতে নেবে না। কোন দিনই দেশাত্ববোধক-জাগরনী গান গাইবে না। ততদিনে পাখির পাখার মতো আমার পালক গজিয়েছে। আমি একাদশ বিজ্ঞান শ্রেণির প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমার শিরা-উপশিরায় প্রবাহমান টগবগে তরুণ প্রতিবাদী রক্ত আমাকে পীড়া দিতে লাগলো- প্রতিবাদ করার জন্য, মিছিলে যাওয়ার জন্য। আমি ঝংকারের সুর শুনে সতীর্থদের সাথে মিছিলে গেলাম, শ্লোগান দিলাম ‘পদ্মা, মেঘনা-যমুনা, তোমার আমার ঠিকানা’ কিংবা ‘মুজিব হত্যার পরিণাম বাংলা হবে ভিয়েতনাম’ প্রভৃতি। কে আমাকে আটকায় ? শুধু তাই নয়, আমি কিছু দেশাত্মবোধক জাগরণী গানের উপর নিজের অস্তিত্ব খুঁজে পেলাম। ভাঙ্গা গলায় বেসুরা সুরে সমেবেত সকলের সাথে গাইতে লাগলাম.. ‘কফি হাউজের সেই আড্ডাটা… কোথায় হারিয়ে গেল সোনালী বিকেল গুলো সেই…।’ মনোমুগ্ধ হয়ে সুর তুলতে চাইতাম ‘মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি-একটি মুখের হাসির জন্য অস্ত্র ধরি…।’ অভিভাবক শ্রেণীয় বিজ্ঞ মহোদয় ও মহোদয়াগন আরও বলেছিল- কখনও প্রতিবাদ করিবে না, সমাজকে মানিয়ে নিবে। জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে চাইলে, তোষামোদি শিখ।
তৃতীয় ধাপেও আমি ব্যর্থ। বিবেকের দংশনে দংশিত হয়ে আমি সেইসব বিবেক বর্জিত আদর্শহীন সমাজপতিদের চোঁখে ভাল থাকতে পারলাম না। তাই আজ আমি দংশিত বিবেক নিয়ে অজানা গন্তব্যে উদ্দ্যেশ্যহীনভাবে নিরুদ্দেশ হতে চাই। হয়তোবা এ গানই আমার জীবনের শেষ গান। এতেও দু:খ নেই। তবে প্রস্থান বা মৃত্যুটা যেন মাথা উঁচু করে হয়। এটাই আমার গর্ব ও সুখ হয়ে থাকবে-সুন্দর আগামীর প্রত্যাশায়।
চতুর্থধাপেও আমি লজ্জিত ও হতভম্ব। আমি কখনো সুদর্শন পুরুষ বা রমনী মোহন ব্যক্তি ছিলাম না। কিন্তু আমার সেই চিরচেনা ভাল লাগা ও ভালবাসার মানুষটি আজ মুখের উপর বলে উঠল, ‘সুযোগ পেলে তুমিও হবে পঞ্চ পান্ডবদের একজন। হায়রে, দুর্ভাগা কপাল আমার। যেন জন্ম থেকেই পোড়া। শেষ পর্যন্ত নারী লোভী একজন ইভটিজারের স্বনামধন্য পদকটি আমার গলায় ঝুলে গেল। পদকের দড়িটি যদি ফাঁসির দড়ি হতো, তবুও শান্তি পেতাম।

অবশেষে বলব, ভদ্রবেশী অপরাধীদের পাল্লায় পড়ে আজ আমি নি:স্ব, হীন, কপট ও সর্বোপরি মর্যাদাহীন। মৃত্যু যেন আমাকে হাতছানি দিচ্ছে।। তবুও আমি ঘুরে দাঁড়াব- প্রয়োজনে বিপ্লব করব, বিদ্রোহ করব। তবুও সমাজপতিদের চোখ রাঙানো মানব না, মানি না। প্রভু তুমি আমায় ক্ষমা কর।

 

শাফায়েত জামিল রাজীব
সম্পাদক
একুশে টাইমস

Print Friendly, PDF & Email

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




© All rights reserved © 2021
Design By Rana