বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:২৯ অপরাহ্ন

জয়বাংলা থেকে মুক্তির গান

জয়বাংলা থেকে মুক্তির গান

লেয়ার লেভিন একজন খ্যাতনামা মার্কিন চলচিত্র নির্মাতা। সত্তর সালে পূর্ব বাংলার উপকুলীয় অঞ্চলে প্রলয়ংকারী ঘুর্ণিঝড় ও জলচ্ছাসের কারণে লাখ-লাখ মানুষ প্রাণ হারায়। সেই সময়ে, লেয়ার লেভিন পূর্ববাংলায় ছুটে আসেন। এবং উপদ্রত অঞ্চলে মানুষের মৃত্যু- অনাহার-আশ্রয়হীনতা ক্যামেরায় ধারণ করেন। এভাবে পূর্ববাংলার মানুষের প্রতি এক ধরনের মায়া-মমতা বোধ তাঁর হৃদয়কে আলোড়িত ‘জয়বাংলা’ থেকে মুক্তির গানকরে। তথাপি একাত্তর সালে পাক হানাদার বাহিনীর বর্বরোচিত অত্যাচার ও নারকীয় হত্যাযজ্ঞ প্রত্যক্ষ অবলোকন করতে দ্বিতীয়বার এদেশে আসেন। সীমান্তবর্তী অঞ্চলে পাকবাহিনী হত্যা-ধর্ষণ-লুটতরাজ তাকে বিস্মিত করে। ভারত সীমান্তবর্তী শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে পূর্ব বাংলা থেকে প্রাণ ভয়ে পালিয়ে আসা অন্নহীন-চিকিৎসাহীন কঙ্কালসার দেহগুলো তাঁর কোমল হৃদয়কে-কাঁদিয়ে তোলে। অত:পর তিনি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের একটি গানের দলের সাথে সীমান্তবর্তী শরণার্থী কাম্পগুলো ঘুরে বেড়ান। তখন শরণার্থী শিবির ও যুদ্ধফ্রন্টের ছবি ক্যামেরায় ধারণ করেন। ২২ ঘন্টার ফুটেজ থেকে ৭২ মিনিটের একটি প্রামাণ্য চিত্র নির্মাণ করেন। মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক এই প্রামাণ্য চিত্রটি নামে দেন-‘জয়বাংলা’। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শিবিরে থাকায়, লেভিন স্বদেশে গিয়ে ‘জয়বাংলা’কে ফিল্মে রূপান্তরিত করার জন্য সেন্সর ও আর্থিক সাহায্য পাইনি।
দীর্ঘ দুই যুগ পর ছিয়ানব্বই সালে বাংলাদেশের সৃষ্টিশীল চলচিত্র নির্মাতা প্রয়াত তারেক মাসুদ ও তার মার্কিন স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদের প্রচেষ্টায় লেভিনের ‘জয়বাংলা’কে নবরূপায়ন দেওয়া হয় ‘মুক্তির গান’ ছবিটিতে। ‘মুক্তির গান’ পরিচালক তারেক মাসুদের ভাগ্যে এনে দেয়-১৩তম জাতীয় চলচিত্র পুরস্কার। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে রজত জয়ন্তীতে চলচিত্রকার লেভিন ঢাকায় এসেছিলেন এবং সে সময় উনি ‘জয়বাংলা’ নামের ডকুমেন্টারী তৈরীর প্রেক্ষাপট ব্যক্তিগত আবেগ ও অনুভতির সাথে প্রকাশ করেছেন।

 

শাফায়েত জামিল রাজীব
সম্পাদক
একুশে টাইমস্

 

Print Friendly, PDF & Email

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




© All rights reserved © 2021
Design By Rana