শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:৪২ পূর্বাহ্ন

জেল হত্যা দিবস: জাতির কলঙ্ক

জেল হত্যা দিবস: জাতির কলঙ্ক

পঁচাত্তরের ৩ নভেম্বরের জেল হত্যার সঙ্গে কারা জড়িত? কী করেছিল ঘটনার আগে ও পরে? কিভাবে সংগঠিত হলো এই নির্মম হত্যাকান্ড? ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুবেদার ও সহবন্দিদের ভাষ্য নিয়ে চোখ ভিজে আসা, হৃদয়কে নাড়া দেয় সেই সব মর্মস্পশী বিবরন তৈরী করেছেন তাজউদ্দিন আহমেদের কন্যা সিমিন হোসেন রিমি। প্রধান জেল সুবেদারের ভাষ্য ছিল এ রকম:-
জেল সীমাদার মধ্যেই আমার বাসস্থান ছিল। সম্ভবত রাত আড়াইটার সময় পাগলা ঘন্টার আওয়াজ শুনে আমি দৌড়ে জেলে গেটে চলে আসি। আমি তখন ডিউটিতে ছিলাম না, তাই আমার পড়নে সিভিল পোশাক। গেটে এসে দেখি সমস্ত অফিসার সেখানে। তারা যেন সবাই কিসের অপেক্ষায় আছেন। আমাকে দেখেই জেলার সাহেব বললেন, ‘যান পোষাক বদলে আসেন।’ আমি কোয়াটারে গিয়ে কাপড় বদলে আসতে প্রায় তিনটা বাজছে, কী ব্যাপার কিচুই বুঝতে পারছি না। ভিতরে আটজন এরিয়া জমাদার যার যার ভাগ করা এরিয়ার ডিউটি করে। আমি তাদেরকে ডাক দিয়ে জিজ্ঞাস করলাম কী ব্যাপার? ওরা আমাকে বললো, স্যার আমরা তো কিছুুই জানি না। ওদের সঙ্গে কথা বলে আমি আবার জেল গেটে এসে দেখি আর্মির লোক এসে গেছে। আইজি, ডিইআইজি সবার সামনেই জেলার সাহেব আমার হাতে একটা কাগজ তুলে দিলেন। বললেন এদের সবাইকে একসঙ্গে করুন। আমি দেখলাম কাগজটাতে ছয় জনের নাম। শেষ দুটো নাম ছিল তোফায়েল এবং রাজ্জাক সাহেবের। আমি সঙ্গে সঙ্গেই বললাম এই দুইজন লোক তো আমাদের জেলে নেই। তখন আবার এই দুটো নাম কেটে তাজউদ্দিন, কামরুজ্জামান, মনসুর আলী এবং সৈয়দ নজরুল ইসলাম সাহেবের নাম লেখা কাগজ দিয়ে জেলার সাহেব এই চারজনকে ভিতরে এক সঙ্গে করতে বললেন। আমি ভিতরে গিয়ে এরিয়া জামাদারকে…। ইতি মধ্যে আমাদের অফিসাররাও ভিতরে চলে এসেছেন। আমার সামনেই গেট খোলা হল। ১নং রুমে তালা খোলার সময় তাজউদ্দিন সাহেব জিজ্ঞেস কররেন, কী ব্যাপার ? আমি বললাম আর্মি এসেছে। লিষ্টের নামের দুইজন ছিলেন ১নং রুমে, বাকী দুইজন ছিলেন ২নং ও ৩নং রুমে। বাকী দুইরুম খোলার সময় আমাকে সবাই জিজ্ঞেস করলেন, কী ব্যাপার ? আমি তো কিছুই জানি না। বললাম, বোধহয় নতুন মন্ত্রিসভা গঠন হবে। তাই আপনাদের নিয়ে যাবে। ১নং রুমে ৪জনকে এক সঙ্গে করবার পর তাজউদ্দিন সাহেব তাঁর তিন সঙ্গীর দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘সময় নেই, ওযু করে আসেন।’ চারজনই বাধরুমে থেকে ওযু করে এলেন। সৈয়দ সাহেবের চৌকিতে সবাই বসলেন। আমি রুমেই দাঁড়িয়ে ছিলাম। এর মধ্যে ঘাতক চারজন ঢুকলো। ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই সামনাসামনিভাবে গুলি করলো। প্রায় ৬০ রাউন্ড গুলির শব্দ। আমি আর্মিদের পিছনে আইজি, ডিআইজি সবাই। তখন সব কিছু অন্য রকম হয়ে গেলো, আমি ভয়ে দৌড় দিয়ে ৩নং সেলের পিছনে গিয়ে দাঁড়ালাম। সেই সেলে এসপি মাহবুবসহ আরো যারা ছিলেন তারা সবাই ভয়ে আতঙ্কিত, কেউ এমন অবস্থা যে নিজের অবস্থা নিজে বলতে পারে না।
কেউ সেলের ভিতরে ঢুকতে পারে না আর ওরা অস্ত্র নিয়ে ঢুকছে। এটা খুব উঁচু মহলের আদেশ ছিল। জেলেই কথায় কথায় শুনেছি চার নেতাকে হত্যার নির্দেশ এসেছি বঙ্গবন্ধুকে আমি সেই রাতে ঘাতকের পোষাক দেখেই বুঝে ছিলাম এরা কোন অঘটন ঘঠিয়ে যাচ্ছে। প্রতি বছর নভেম্বর মাস আসে, আমি খবরের তাদের ছবি দেখলে অস্থির হয়ে পড়ি। আমি এই হত্যাকান্ডের বিচার চাই। আর প্রকৃত খুনীদের বিচারের মাধ্যমেই জাতি কলঙ্ক মুক্ত হতে পারে।
সম্পাদক- একুশে টাইমস

Print Friendly, PDF & Email

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




© All rights reserved © 2021
Design By Rana