বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:০৯ অপরাহ্ন

ঐতিহ্য, সংগ্রাম ও স্বাধীনতায় ‘দৈনিক ইত্তেফাক’

ঐতিহ্য, সংগ্রাম ও স্বাধীনতায় ‘দৈনিক ইত্তেফাক’

দৈনিক ইত্তেফাক এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া

শেখ মুজিবকে যদি নৌকার মাঝি বলা হয়, তাহলে দৈনিক ইত্তেফাক সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়াকে নৌকার দাঁড়ি বললে ভুল হবে না। দেশভাগের পর পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক রাজধানী ঢাকা থেকে প্রকাশিত খবরের কাজগগুলোর মধ্যে দৈনিক আজাদ, দৈনিক মিল্লাত, সাপ্তাহিক সওগাত বা মোহাম্মাদী এগুলোই উল্লেখযোগ্য ছিল। তবে এসব গণমাধ্যমের অধিকাংশ নীতি নির্ধারকরা ছিল ঢাকা নবাব বাড়ী পন্থী মুখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিম উদ্দিনের গ্রুপ সমর্থনকারী দল। ক্ষমতাসীন মুসলিমলীগের আরেকটি বিরোধী উপদলের নেতৃত্বে ছিলেন মাওলানা ভাসানী, শামছুল হক, শেখ মুজিবুর রহমান, অলিআহাদ ও তোহা প্রমুখ। কিন্তু ১৫০, মোগলটুলির অফিসটি ছিল এ উপদলের রাজনৈতিক কেন্দ্র। কিন্তু তাদের পক্ষে তখন কলম যুদ্ধ করার মতো কেউ ছিলো না। অতপর: এই উপদলের নেতৃত্বে ১৯৪৯ সনের ২৩জুন আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠিত হলে; দলটি সভাপতি মাওলানা ভাসানী সাপ্তাহিক ইত্তেফাক নামে একটি খবরের কাগজের প্রকাশনা শুরু করেন। কিন্তু অর্থের অভাবে কয়েকসপ্তাহ ছাপানোর পর কাগজটির প্রকাশনা বন্ধ হয়ে যায়। তদুপরি পঞ্চাশ সালের শেষের দিকে মাওলানা ভাসানী এবং শেখ মুজিবুর রহমান জেলে বন্দী থাকা অবস্থায় বাংলার অন্যতম কলামিস্ট, মুক্তির দিশারী মানিক মিয়াকে অনুরোধ করল। পুনরায় প্রকাশ করার জন্য। যদিও মানিক মিয়ার তেমন সচ্ছল ছিল না তবুও দায়িত্ব নিলেন ইত্তেফাক প্রকাশনার। অল্প দিনেই তাঁর সম্পাদকনায় সাপ্তাহিক দৈনিক ইত্তেফাকে রূপ নিল। আওয়ামীলীগের মুখপত্র হিসেবে পত্রিকাটি জনমনে বিশেষ আকর্ষন সৃস্টি করল। আর মানিক মিয়ার অসাধারণ লেখা, স্বাধীন মননশীলতা ও খুরধার লেখা আমাদের মুক্তির সংগ্রামকে একধাপ এগিয়ে নিয়ে গেল। ’৬৬ ছয় দফা থেকে ’৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান ও ’৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের অনুপ্রেরণা যুগিয়ে গেল দৈনিক ইত্তেফাক। সেই উত্তাল দিনগুলিতে মানিক মিয়ার ধারাবাহিক রাজনৈতিক প্রবন্ধ ‘ধীরে বহে বুড়িগঙ্গা’ কলামটিকে আমাদের মুক্তির সংগ্রামের অন্যতম সনদ বললে ভুল হবে না। তাইতো বোধহয়, ’২৫শে মার্চের কালো রাত্রিতে পাক হানাদাররা দৈনিক ইত্তেফাক অফিস কামানের গোলা ও আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলে। উল্লেখ্য যে, আইয়ুবশাহী ’৬৯ এ তীব্র গণআন্দোলনে যখন গদিচ্যুত হতে যাচ্ছিল; তখন মানিক মিয়াকে কেন্দ্রীয় তথ্য ও বেতারমন্ত্রীর দায়িত্ব দিতে চাইলে আপোষহীন মানিক মিয়া তা প্রত্যাখ্যান করেন। স্বাধীনতা সংগ্রামী, এই মহান বীরপুরুষ বাঙলার মানুষের মুক্তির জন্য আজীবন কলম যুদ্ধ চালিয়ে গেলেন।

 

মো: ইমরান হোসেন
প্রধান বার্তাসম্পাদক
একশে টাইমস্ বিডিডটকম

Print Friendly, PDF & Email

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




© All rights reserved © 2021
Design By Rana