একুশে ডেস্ক:
ভোজ্য তেলের আমদানিকারক ও পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর তরফ থেকে গত সপ্তাহে সয়াবিন ও পাম অয়েলের দাম বাড়ানোর জন্য নতুন করে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে। তাদের আহ্বানে সাড়া না দিয়ে মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, আপাতত বাড়ানো হবে না সয়াবিন তেলের দাম। কিন্তু দাম বাড়াতে এবার নতুন কৌশল নিয়েছে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। গত এক সপ্তাহ ধরে ভোজ্য তেলের সরবরাহ কমিয়ে বাজারে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করা হয়েছে। এমন অভিযোগ করেছেন রাজধানীর বিভিন্ন বাজারের খুচরা ব্যবসায়ীরা। এদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়াই দুয়েকটি প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে সয়াবিন তেলের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে বলেও জানান ব্যবসায়ীরা। গতকাল রাজধানীর বেশ কয়েকটি বাজারের মুদি দোকান ঘুরে এর সত্যতা মেলে।
রাজধানীর অন্যতম বৃহৎ বাজার কারওয়ান বাজারের ইউসুফ জেনারেল স্টোরের স্বত্বাধিকারী মো. ইউসুফ জানান, নতুন বছরের একেবারে শুরু থেকেই তেল কোম্পানিগুলোর বিক্রয় প্রতিনিধিরা জানিয়ে আসছিলেন আবারও দাম বাড়বে ভোজ্য তেলের। তারা জানিয়েছিলেন, এই দফায় লিটারে ৮ টাকা বাড়ানো হবে। আমাদের কাছ থেকে বাড়তি দামের অর্ডারও নিয়ে নেন তারা। পরে জানতে পারলাম সরকার নতুন করে দাম বাড়ানোর অনুমতি দেয়নি, কিন্তু এরপর থেকেই মিলমালিকরা বাজারে ভোজ্য তেলের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন। বোতলজাত এবং খোলাÑ উভয় ধরনের ভোজ্য তেলেরই সরবরাহ কমিয়েছেন তারা। বোতলজাত সয়াবিনের ১ লিটারের বোতল বাজারে কিছু মিললেও ৫ লিটারের বোতলজাত সয়াবিনের সরবরাহ অনেক কমিয়ে দিয়েছেন তারা। আমরা যতটা জানতে পেরেছিম এভাবে তারা বাজারে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে দাম বাড়াতে চান।
শুক্রবার রাজধানীর বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরেও এর সত্যতা মেলে। প্রায় প্রতিটি বাজারের মুদি দোকানে সয়াবিন তেলের সঙ্কট দেখা গেল। দোকানগুলোতে এখন চাহিদার অর্ধেক বোতলজাত সয়াবিন তেলও নেই। সর্বশেষ মূল্য অনুযায়ী ১ লিটার সয়াবিন তেলের বোতলের গায়ে মূল্য লেখা রয়েছে ১৬০ টাকা। অথচ অনেক দোকানে বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ টাকা করে। ২ লিটার বোতলজাত সয়াবিনের মূল্য ৩১৮ টাকা। অধিকাংশ দোকানে মূল্য রাখা হচ্ছে ৩২৫ টাকা। এ ছাড়া ৫ লিটারের বোতলের গায়ে মূল্য লেখা রয়েছে ৭৬০ টাকা। ৫ লিটারের বোতল সরবরাহ কম থাকায় অনেক দোকানে বিক্রি হচ্ছে ৭৭০ টাকায়।
রাজধানীর মধ্যপাইকপাড়া বউবাজারের মুন্না স্টোরের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ মুন্না সময়ের আলোকে বলেন, বাজারে এখন সয়াবিন তেল নেই বললেই চলে। ১ ও ২ লিটারের বোতলজাত সয়াবিনের সরবরাহ কিছুটা আছে; কিন্তু গত এক সপ্তাহ ধরে ৫ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন দেওয়া একেবারে বন্ধ করে দিয়েছে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। কোম্পানির লোকেরা এলে তারা বলেন, কারখানায় তেলের সঙ্কট, এজন্য ৫ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন সরবরাহ করা যাচ্ছে না। মুন্না বলেন, ‘আসলে যখনই কোম্পানিগুলো তেলের দাম বাড়ানোর চিন্তা করে ঠিক তার আগ দিয়ে বাজারে সয়াবিন তেলের সরবরাহ কমিয়ে দেয়। বাজারে কৃত্রিম সঙ্কট দেখিয়ে তারা বলেন, বিশ্ববাজারে দাম বেড়েছে, তাই তেল আসছে কম। এজন্য বাজারে সরবরাহ কমে গেছে। অথচ এর দুয়েকদিন পরই দেখা যায় দাম বাড়িয়ে বোতলের গায়ে নতুন মূল্যের লেবেল লাগানো তেল দিচ্ছে তারা। আমরা আশঙ্কা করছি এবারও তারা দাম বাড়াবেন। এজন্যই তারা এই কৃত্রিম সঙ্কট করছেন।