বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৪৯ অপরাহ্ন
মোঃ মাইন উদ্দিন, কুলিয়ারচর প্রতিনিধি :
কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে হিন্দু ধর্মাবলম্বী নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া ১৪ বছর ৯ মাস বয়সী এক শিশু ছাত্রীকে নিয়ে দুর অজানায় পাড়ি জমিয়েছে আনুমানিক ৩২ বছর বয়সী চাচা! গত (৪ অক্টোবর) মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টার দিকে উপজেলার সালুয়া ইউনিয়নের উত্তর সালুয়া গ্রামের বর্মন পাড়ায় এই ঘটনা ঘটে। উধাও হওয়া চাচা হলেন, বর্মন পাড়ার স্বর্গীয় নিরুদ চন্দ্র বর্মনের পুত্র সুকান্ত চন্দ্র বর্মন। আর নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছাত্রী একই বাড়ির। তারা দু’জন সম্পর্কে চাচা-ভাতিজি। অর্থাৎ ছাত্রী হচ্ছে সুকান্ত চন্দ্র বর্মনের চাচতো ভাইয়ের মেয়ে।
এ ঘটনায় গত ৫ অক্টোবর বুধবার ছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে কুলিয়ারচর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছে। এ বিষয়ে ছাত্রীর পরিবার যদিও বলছে তাদের মেয়েকে অপহরণ করে নিয়ে গেছে কিন্তু প্রতিবেশীরা বলছে বিভিন্ন কথা। প্রতিবেশী ও ছেলের পরিবারের ভাষ্যমতে চাচা-ভাতিজির মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এ ঘটনা নিয়ে বড় বিপাকে পড়েছে হিন্দু সম্প্রদায়ের সমাজপতিরা। তাদের মতে এটি অপহরণ হোক আর প্রেমের সম্পর্ক-ই হোক হিন্দু ধর্ম অনুযায়ী চাচা-ভাতিজির মধ্যে বিবাহবন্ধন কিছুতেই সম্ভব নয়। এছাড়াও রয়েছে আইনি জটিলতা। দেশের প্রচলিত আইনে সব ধর্ম ও সম্প্রদায়ের জন্য বিয়ের আইনি বয়স মেয়েদের ক্ষেত্রে ১৮ আর ছেলেদের ক্ষেত্রে ২১ বছর।
১৮ ও ২১ বছর বয়সের নিচে কোনো মেয়ে ও ছেলেশিশুর মধ্যে বিয়ে হলে তা বাল্যবিবাহ হিসেবে পরিগণিত হবে। অপদিকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন। এ আইনের ধারা ৯(১)-এর ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, ‘‘যদি কোন পুরুষ ১৬ বছরের কম বয়সের কোন নারীর সাথে সম্মতিসহ বা সম্মতি ব্যতিরেকে যৌন সঙ্গম করে, তাহলে ওই পুরুষ উক্ত নারীকে ধর্ষণ করেছেন বলে গণ্য হবে৷” প্রচলিত আইনে স্পষ্ট যে ১৬ বছরের নীচে হলে নারীর সম্মতি থাকলেও তা ধর্ষণ৷ কারণ নারী প্রাপ্তবয়স্ক নয়৷ তার স্বাধীন সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা নেই৷ কাজেই আইনের ব্যাখ্যা অনুযায়ী স্পষ্ট যে, অপ্রাপ্ত বয়সে বিয়ে দেওয়া মানেই শিশু কন্যাকে ধর্ষণের শিকার হতে বাধ্য করা, শিশুটি ধর্ষণের শিকার হওয়া ও পুতুল খেলার বয়সে সন্তানের মা হতে বাধ্য করে মৃত্যুর দিকে ঢেলে দেওয়া। অর্থাৎ এক দিকে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সামাজিক রীতিনীতি, অন্যদিকে দেশের প্রচলিত বিবাহ আইন এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ধারা ৯(১)-এর ব্যাখ্যা। এ অবস্থায় এখন বড়ই বিপাকে পড়েছে সমাজপতিারা। জনা যায়, চাচা সুকান্ত চন্দ্র বর্মন এর আগেও পার্শবর্তী আরেকটা মেয়েকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে নিয়ে গিয়েছিল। সেদিন সেই বিয়েটি সমাজপতিরাই সম্পন্ন করেছিল।
এ বিয়ের নামে কিছুদিন রঙ্গলীলা করার পর মেয়েটিকে তাড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সুকান্ত চন্দ্র বর্মন। পরে এ নিয়ে আবারও সমাজপতিরা এগিয়ে এসে ছেলে মেয়ে দু’জনকে আলাদা করে দেয়। যা এলাকার সকলেই জানে। তবে এই ঘটনাটিও শোনা যাচ্ছে স্থানীয় সমাজপতিরা নাকি দুই পক্ষকে নিয়ে বসে মিমাংসার চেষ্টা চালাচ্ছে! এটা কি করে সম্ভব? যদি তা-ই হয় তাহলে কি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সামাজিক রীতিনীতি, দেশের প্রচলিত বিবাহ আইন ও নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ধারা ৯(১)-এর ব্যাখ্যা” তাদের কাছে অসহায়? যদি অসহায়ই হয়, তাহলে তাদের কাছে এমন কি গ্যারেন্টি আছে যে এই পুরুষটির সঙ্গে নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া অবুজ শিশুটি দীর্ঘদিন বসবাস করতে পারবে? যদি এ গ্যারান্টি না থাকে তাহলে কি ধরে নেব যে পূর্বের ঘটনার ন্যায় আবারও হবে?
তবে অভিযোগের বিষয়ে জানতে কুলিয়ারচর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা’র সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এদের উদ্ধারের তৎপরতা চলছে।