বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ ও সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বৈষম্য কমানোর দাবিতে শ্রেণিকক্ষ বন্ধ রেখে গত ১১ জুলাই থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে টানা অবস্থান কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছেন শিক্ষকরা। শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকও করেছেন তারা। তবে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করা সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেছেন, এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের জন্য যে বড় আর্থিক সক্ষমতা থাকা দরকার, তা বৈশ্বিক সংকটের এ সময়ে দেশের নেই। তবে জাতীয়করণের বিষয়ে দুটি কমিটি করার কথা জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। এক তথ্যে জানা যায়, দেশে ২০ হাজার ৯৬০টি মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। বিপরীতে সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে ৬৮৪টি। সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১ কোটি। শিক্ষক রয়েছেন সব মিলিয়ে প্রায় ৩ লাখ। শিক্ষকরা যে পরিমাণ বেতন-ভাতা পেয়ে থাকেন, তা দিয়ে পরিবার চালানো বেশ কষ্টসাধ্য। মাধ্যমিক শিক্ষকদের এই চাওয়া দীর্ঘদিনের। এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা ২৫ শতাংশ উৎসব ভাতা, ১ হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া এবং ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পান। একই কারিকুলামের অধীনে থেকেও সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষকদের মধ্যে বৈষম্য রয়েছে। তবে এই বৈষম্যের অবসান হওয়া উচিত বলে মনে করছে শিক্ষা-সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞ মহল।
শিক্ষাবিদ ও শিক্ষা-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নির্বাচনের প্রাক্কালে শিক্ষকসহ পেশাজীবীরা দাবি আদায়ে আন্দোলনে নামেন। এ সময় সরকারও কিছুটা নমনীয় থাকে। সমস্যা সমাধানে প্রতিশ্রুতি দেয়। শিক্ষাকে জাতীয়করণের দাবিটি যৌক্তিক। কিন্তু নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারকে চাপ দেওয়া নীতিগতভাবে ঠিক হয়নি শিক্ষকদের। জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বার্ষিক পরীক্ষা এগিয়ে নভেম্বরে আনা হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে শিক্ষকরা শ্রেণিকক্ষ ফেলে আন্দোলনে, সিলেবাস শেষ করবেন কে? গড়পড়তায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের পক্ষেও নন তারা। সারা দেশে অপরিকল্পিতভাবে যত্রতত্র অপ্রয়োজনীয়ভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে। অনেক শিক্ষকের শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকলেও পাঠদানের যোগ্যতা নেই। তবে দেশে মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে শিক্ষা জাতীয়করণ জরুরি।