দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বৈচিত্র্যময় কিছু মানুষ রয়েছে। বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের তথ্য অনুযায়ী ৪৫টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কিংবা উপজাতি রয়েছে এ দেশে। বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রামে তাদের অবস্থান উল্লেখযোগ্যসংখ্যক রয়েছে। যারা দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় দুই শতাংশ। বৈচিত্র্যময় এ জনগোষ্ঠীর মানুষ অনেক সময় পাহাড়ি, অনেক সময় জুম্ম এবং অনেক সময় নিজেদের উপজাতি হিসেবে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেছে।
ব্রিটিশ শাসনামলে ব্রিটিশরা ইংরেজিতে তাদের ট্রাইবাল সম্বোধন করত। সেই ট্রাইবাল শব্দটা ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে। যার বাংলা অর্থ উপজাতি। তখন থেকে বৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠীর লোকেরা নিজেদের উপজাতি হিসেবে সর্বদা পরিচয় দিত। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও আমরা দেখতে পাই উপজাতিরা নিজেদের উপজাতি হিসেবেই পরিচয় দিতে গর্ববোধ করেছে।
যার প্রমাণ ১৯৯৭ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে উপজাতিদের মুখপাত্র পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সঙ্গে যে অসাংবিধানিক বিতর্কিত পার্বত্য চুক্তি হয়েছিল সেই চুক্তিতেও নিজেদের উপজাতি হিসেবে স্বাক্ষর করেন। বাংলাদেশ সংবিধানের ২৩ (ক) অনুচ্ছেদ উপজাতি হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এখন প্রশ্ন হলো এতদিন যারা নিজেদের উপজাতি হিসেবে দাবি করত তারা হঠাৎ নিজেদের আদিবাসী দাবি করার অর্থ কি?
১. সমাজতাত্ত্বিকভাবে আদিবাসী বলতে তাদেরকেই বোঝায় যারা প্রাগ-ঐতিহাসিককাল থেকে নির্দিষ্ট অঞ্চলের বাসিন্দ বা ভূমিজ সন্তান। অর্থাৎ যারা নির্দিষ্ট জনপদের সৃষ্টিলগ্ন থেকে সেই জনপদের বাসিন্দা এবং যারা আদিম সংস্কৃতির ধারক এবং বাহক। আদিম সংস্কৃতির কোনো কিছু তারা ত্যাগ করেনি। আদিবাসীদের কাছে সভ্যতার আলোকবর্তিকা পৌঁছায়নি এবং তারা অনগ্রসর এবং পশ্চাৎপদ।
২. জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলওর) আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সম্মেলনে আদিবাসী চিহ্নিত করা হয়েছে এভাবেÑআদিবাসী বা দেশজ মানবসমাজ, জনগোষ্ঠী
অথবা জাতিসত্তার পরিচিতি পাওয়ার অধিকারী তারাই, যাদের প্রাক-আগ্রাসন ও প্রাক-সাম্রাজ্যবাদী অধিকারের আগে থেকেই একটি ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতা আছে, যা তারা নিজ বাসভূমিতে তৈরি করেছিল। যারা তাদের বাসভূমিতে অথবা কিয়দংশে পাশাপাশি বসবাসকারী অন্যান্য মানবকুল থেকে নিজের একটি বিশেষত্বময় পৃথক সত্তার অধিকারী মনে করে। যারা আজ সমাজের প্রতিপত্তিশালী না হয়েও ভবিষ্যৎ বংশধরদের জন্য তাদের নিজস্ব গোষ্ঠীসত্তা, সাংস্কৃতিক কাঠামো, সামাজিক প্রতিষ্ঠান ও বিধিব্যবস্থা রেখে যেতে চায় একটি বিশেষ মানবসমাজের ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ন রাখার জন্য।