রবিবার, ১০ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৩৯ পূর্বাহ্ন

পানিতে ডুবে মৃত্যু রোধ করা জরুরি

পানিতে ডুবে মৃত্যু রোধ করা জরুরি

বন্ধুদের সঙ্গে খেলতে খেলতে পানিতে পড়ে যায় অনেক শিশু। সাঁতার শিখতে গিয়েও তলিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। গোসল করতে গিয়ে পা পিছলে ভেসে যাওয়ার খবরও পাই গণমাধ্যমে। শিশু থেকে প্রাপ্তবয়স্করা- কেউ বাদ যান না এমন দুর্বিপাক থেকে। সাঁতার না জানার কারণেও এমন প্রাণহানি ঘটে। প্রতিটি ঘটনাই ঘটে অগোচরে, মুহূর্তের মধ্যে। টের পেয়ে উদ্ধার করতে করতে বড় দেরি হয়ে যায়। অনেক শক্তিশালী মানুষও পানির কাছে অসহায়। ফলে পরিবারে বাড়ে কান্নার রোল। সারাজীবন গ্লানি বয়ে বেড়াতে হয় অভিভাবককে। মা-বাবার বুকফাটা চিৎকার আর ফিরিয়ে আনতে পারে না আদরের ধনকে। দিনের পর দিন চাপা পড়তে থাকে এই দীর্ঘশ্বাস। তবুও সচেতনতার অভাব। কার্যকরী ব্যবস্থার অভাব।
এভাবে প্রতি বছর শিশু থেকে শুরু করে তরুণ- অনেকেই পানিতে ডুবে মারা যান। বাংলাদেশে বর্ষাকালের শুরু থেকেই এই মৃত্যুর হার বাড়তে থাকে। চলে শীত আসার আগ পর্যন্ত। কারণ চারদিকে অথৈ পানি। এর প্রধান কারণ সাঁতার না জানা। অনেকে সমুদ্রসৈকতে ঘুরতে গিয়ে, কোথাও বেড়াতে গিয়ে বা শখের বশে পানিতে নেমেও প্রাণহানির শিকার হন। তবে পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যুর সংখ্যাই বেশি হবে। সরকার শিশুমৃত্যুর হার কমাতে সক্ষম হলেও পানিতে ডুবে মৃত্যুর হার কমানো যাচ্ছে না। কারণ এখানে পরিবারের ভূমিকা বা সচেতনতা সবচেয়ে বেশি জরুরি। কেননা আমাদের সন্তানকে সাঁতার শেখাতে হবে। সাঁতার না জানলে পানির আশপাশে যেতে দেওয়া ঠিক হবে না। সার্বক্ষণিক চোখে চোখে রাখতে হবে।

পরিসংখ্যান বলছে, গত সাড়ে তিন বছরে দেশে ৩ হাজার ৮০৫ জন পানিতে ডুবে মারা গেছে। যাদের মধ্যে ৮৮.৫১ শতাংশ বা ৩ হাজার ৩৬৮ জনই শিশু। গণমাধ্যম উন্নয়ন ও যোগাযোগ বিষয়ক প্রতিষ্ঠান ‘সমষ্টি’র তথ্য মতে, ২০২০ সালে পানিতে ডুবে মারা গেছে ৮০৭ জন, ২০২১ সালে ১ হাজার ৩৪৮ জন, ২০২২ সালে ১ হাজার ১৩০ জন এবং ২০২৩ সালের ১৭ জুলাই পর্যন্ত ৫১৬ জন। প্রতিষ্ঠানটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য সংগ্রহ করেছে। এর বাইরেও অনেক ঘটনা থাকতে পারে, যা রয়ে যায় গণমাধ্যমের আড়ালে। পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনা থেকে অনেক সময় জন্ম নেয় সহিংসতা। প্রতিবেশী বা খেলার সাথীর পরিবারের সঙ্গে সৃষ্টি হয় কোন্দল। পানিতে পড়ার জন্য কাউকে না কাউকে দায়ী করা হয়। অবুঝ শিশুর বেলায় মূল ঘটনা থেকে যায় অনূদঘাটিত। সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চের (সিআইপিআরবি) নির্বাহী পরিচালক একেএম ফজলুর রহমান বলেছেন, ‘গবেষণায় দেখা যায়, প্রতি বছর পাঁচ বছর বয়সি অন্তত ১১ হাজার শিশুর মৃত্যু হয় পানিতে ডুবে। এই মৃত্যুর বড় অংশের খবর পত্রিকায় আসে না।’ ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর বাংলাদেশে গড়ে ১৭ হাজার শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। এ মৃত্যুর সংখ্যা বিশে^র মধ্যে সর্বোচ্চ। যা মোট শিশুমৃত্যুর ২৮ ভাগ। এ মৃত্যুর বেশিরভাগ খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয় না।
Print Friendly, PDF & Email

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




© All rights reserved © 2021
Design By Rana