শনিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৪৪ অপরাহ্ন
শহীদ লে: কর্ণেল এটিএম হায়দার (বীর উত্তম)। অদম্য সাহসী এক মুক্তিযোদ্ধা অফিসারের নাম। পৈতৃক নিবাস কিশোরগঞ্জের খরমপট্টি (নীল গঞ্জের মোড়) এলাকায়। তিনি ছিলেন পাকিস্তান আর্মির একজন গেরিলা যোদ্ধা ও দক্ষ বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ। মহান মুক্তিযুদ্ধের উষালগ্নে এটিএম হায়দার ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পাকিস্তান আর্মির একটি ব্যাটিলিয়ানের দায়িত্বে ছিলেন এবং যুদ্ধ শুরু হলে ৪র্থ ইস্ট বেঙ্গলের অধিনায়ক মেজর খালেদ মোশারফের সাথে যোগ দেন। সেপ্টেম্বর’ ৭১ পর্যন্ত উনি ২নং সাব সেক্টর কমান্ডার ছিলেন এবং যুদ্ধের শেষের দিকে খালেদ মোশাররফ গুলিবিদ্ধ হলে এটিএম হায়দার ২নং সেক্টরের কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
ভারতের মেলাঘরে উনি খালেদ মোশাররফের নির্দেশে ক্র্যাক প্লাটুন সদস্যদের গেরিলা ট্রেনিং দিতেন। এই দলে ছিল শহীদ রুমি, শহীদ বদি, শহীদ আজাদ, প্রয়াত রাজনীতিবিদ সাদেক হোসেন খোকা, রাজনীতিবিদ মোফাজ্জল হোসেন মায়া, অভিনেতা আসাদ, বিশিষ্ট নাট্য নির্দেশক নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু প্রমুখ এবং আরো অনেকেই।
এপ্রিল মাসে এটিএম হায়দার ভারতীয় ৬ নিরাপত্তা রক্ষীকে নিয়ে একটি ট্রেনের ইঞ্জিনের সংঙ্গে ২টি কামরা সংযুক্ত করে নিজ জন্মভূমি কিশোরগঞ্জে আসেন। এবং ঐ দিনেই নীলগঞ্জের কাছে উনি বিস্ফোরক দিয়ে কালভার্ট ও রেললাইন উড়িয়ে দেন।
১৯৭১ সনে বাঙালি সামরিক অফিসারদের মধ্যে উনি প্রথম ব্যক্তি গেরিলা বাহিনী নিয়ে যুদ্ধ করতে করতে, ডেমরা ও মুগদা দিয়ে ঢাকায় প্রবেশ করেন। ১৬ ডিসেম্বর রেসকোর্স ময়দানে মিয়াজীর আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে একে খন্দকারের পর উনি ছিলেন ২য় বাঙালি অফিসার। সেক্টর ২-এর অধিনায়ক হিসেবে পরের দিন ১৭ ডিসেম্বর সকাল ৮.১৫ মিনিটে রেডিওতে ঘোষণা দেন- ‘প্রিয় দেশবাসী’, ‘আজ থেকে আমরা স্বাধীন ও শত্রুমুক্ত।’ অত্যন্ত দু:খ ও পরিতাপের বিষয় ১৯৭৫ সনের ১৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পর নভেম্বরে সেনা বিদ্রোহে, বিগ্রেডিয়ার খালেদ মোশারফের সঙ্গে উনারও মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। আজ কেউ তা-কে মনে রাখেনি।
অত্যন্ত দু:খ ও পরিতাপের বিষয় শহীদ লে: কর্ণেল হায়দারের বোন ডা: সেতারা বেগম মুক্তিযোদ্ধা বিশেষ অবদানের জন্য ‘বীর প্রতীক’ উপাধিতে ভূষিত হন। কিন্ত এই মহতি নারী প্রবাসে নিরবে- নির্জনে দিন কাটাচ্ছেন।
শাফায়েত জামিল রাজীব
-সম্পাদক, একুশে টাইমস্ নিউজ মিডিয়া