শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৪:১১ পূর্বাহ্ন

পাকুন্দিয়ায় অবাধে চলছে নদীর পাড় কেটে মাটি বিক্রির মহোৎসব

পাকুন্দিয়ায় অবাধে চলছে নদীর পাড় কেটে মাটি বিক্রির মহোৎসব

পাকুন্দিয়া সংবাদদাতা :

কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার চরটেংগাবর গ্রামের পাশ দিয়ে প্রবাহিত ব্রহ্মপুত্র নদের তীরের খাস জমি ও ফসলি জমি কেটে অবৈধভাবে মাটি বিক্রির মহোৎসব চলছে ভূমি খেকোদের। জানা যায়, উপজেলার মজিতপুর গ্রামের মৃত জালাল উদ্দিন’র ছেলে শরীফ ও ৩ নং ওয়ার্ডের মেম্বার আলতাব হোসেন আলতুর ভাই আজিজুল, টান জামালপুর গ্রামের এখলাছ উদ্দিনের ছেলে রাসেল চরটেংগাবর গ্রামের ইন্তাজ উদ্দিনের ছেলে সিদ্দিক ও একই গামের কুদ্দুস আলীর ছেলে ফালান দীর্ঘদিন যাবৎ আইনের তোয়াক্কা না করে অবাধে চালিয়ে যাচ্ছে মাটি বিক্রির এই রমরমা বাণিজ্য।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ভোর থেকে সন্ধা পর্যন্ত চলছে এই কর্মযজ্ঞ। চক্রটি খাস জমির পাশাপাশি ফসলি জমির মালিকদের ফাঁদে ফেলে তাদের কাছ থেকে কম টাকায় মাটি ক্রয় করে পার্শ্ববর্তী গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলা ও পাকুন্দিয়ার বিভিন্ন জায়গায় পুকুর, ডোবা, নালা ও বাড়ির আঙ্গিনা ভরাটের জন্য বেশি দামে বিক্রি করছে এসব মাটি। এমনকি এক জমিতে মাটি কেটে গভীর খননের ফলে পাশের জমিও ভাঙ্গনের কবলে পড়ে। তাই ওই কৃষকও কম টাকায় জমির মাটি বিক্রি করতে বাধ্য হন। এতে যেমন বাড়ছে নদী ভাঙ্গনের আশংকা, ঝুঁকিপূর্ণ হচ্ছে ঘরবাড়ি, তেমনি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে ফসলি জমি। আর প্রতিদিন মাটি বোঝাই শতাধিক ট্রাক চলাচলে গ্রাম জুড়ে ধুলায় অন্ধকারে পরিনত হয়। এসব মাটি বোঝাই ট্রাক কাঁচা রাস্তায় চলাচলের ফলে রাস্তাঘাট ভাঙ্গনের পাশাপাশি সড়ক দুর্ঘটনাসহ ট্রাকের কালো ধোঁয়া ও ধুলোবালিতে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ।

স্থানীয়রা এতে একাধিকবার বাধা দিলেও তা উপেক্ষা করে চক্রটি তাদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এমনকি চক্রটি প্রভাবশালী হওয়ায় প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ করতে সাহস পান না স্থানীয়রা। এই সুযোগে নির্বিচারে চালিয়ে যাচ্ছে অবৈধভাবে মাটি বিক্রির বাণিজ্য। মাটি কাটার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতির প্রয়োজন হয়। কিন্তু এই মহলটি আইনের তোয়াক্কা না করেই দেদারছে কেটে নিচ্ছে মাটি। নদীর তীর থেকে মাটি কাটার ফলে নদীতে ভাঙনের সৃষ্টি হয়। এতে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি জীববৈচিত্র্যও হুমকির মুখে পড়ে। কোনো ফসলি জমির মাটি কেটে নিলে কয়েক বছরের জন্য সেই জমিতে আর ফসল উৎপাদন হয় না। অথচ বছরের পর বছর ধরেই অনুমোদনহীনভাবে মাটি কাটা চলছে। স্থানীয়দের বক্তব্য, ট্রাকে মাটি নেয়ার ফলে রাস্তার ধুলাবালি উড়ে এসে ঘরের কাপড়চোপড় এমনকি খাবারেও এসে পড়ে। এতে আমরা চরাঞ্চলের মানুষ প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হচ্ছি। পাকুন্দিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইউএনও কে বিষয়টি জানানো হয়। পরে এগারসিন্দুর ইউপি চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান বাবু স্থানীয় লোকজন নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে চক্রটিকে অবৈধভাবে মাটি কাটতে বাধা দেন। এবং পরবর্তীতে এভাবে ভূমিদস্যুতা করলে কঠোর ভূমিকা পালন করবেন বলে সতর্ক করেন।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এরপর যদি বাধা না মেনে অবৈধভাবে মাটি কাটা হয়, তাহলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানান। উল্লেখ্য এর আগেও উপজেলা নির্বাহী অফিসার রোজলিন শহীদ চৌধুরী ও সহকারি কমিশনার (ভূমি) তানিয়া আক্তার দফায় দফায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে জরিমানা আদায় করলেও খ্যান্ত দিচ্ছে না এই অবৈধ মাটি বাণিজ্য।

Print Friendly, PDF & Email

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




© All rights reserved © 2021
Design By Rana